আবার CSE ফিল্ডে উচ্চতর শিক্ষার(MSc বা PhD) বেশিরভাগ বিষয়ের নামধাম যাই থাকুক না কেন তা নিয়ে গভীরে ঘাটতে গেলে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাব্জেক্ট গুলো একবিন্দুর উপর দিয়ে চলে গেছে অনেকটা বহমান স্রোতের মতন যেমনঃ Computational Biology/Advanced Digital Image Processing etc. এর বিষয় বস্তু আলাদা হলেও অল্পজ্ঞানে ঘাটাঘাটি করে যা বুঝলাম কাজ করতে হয় সুপারভাইজড/আনসুপারভাইজড লার্নিং এর ওপর বেইজ করে । কিন্তু এদেশের সমাজে পড়াশোনা চলে অনেকটা ব্র্যন্ডিং এর উপর। আর বাদবাকিটা থিওরি আর CGPA আর টাকা কোনটায় বেশি তার ওপর নির্ভর করে আর বাকিটা বিসিএস ! রিসার্চ মাইন্ড, প্র্যাক্টিকাল কাজ জানা, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোর প্রোগ্রামিং ভাল লাগা কিংবা পছন্দের সাবজেক্ট এর পড়ার থেকে ভার্সিটির ব্র্যান্ডিং টাই এদেশে গুরুত্ব পায় বেশি!
গবেষণার তেমন একটা মূল্য বাইরের দেশ গুলোর মতন এদেশে এখনো নাই কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে সাব্জেক্টে বা ভার্সিটিতেই পড়ুক না কেন বিসিএস না দিলে এ সমাজ তোমাকে কেন মেনে নেবে ? তাই বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা নেয়ার চেয়ে সম্মান(Hons) এর চার বছর শেষে তোমার হয়ত মনে হতে থাকবে OOP নিয়ে সারারাত পড়ে না থেকে বিসিএস এর মোটা বইগুলো পড়াই বোধহয় ভাল ছিল। কেননা জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ এদেশে বাইরের দেশ গুলোর মত STEM ফিল্ডে সেভাবে রিসার্চ গ্রান্ট এখনো তৈরি হয়না। আর যাও কিছুটা গ্রান্ট পাওয়া যায় তা পেতেও অনেক ঝক্কি সেটা সবারই জানা! তাই হয়ত গবেষণার সংজ্ঞা হয়ে গেছে বাইরে যেতে লাগে দেশে যেনো কোনো দরকার নাই !
সরকারী পর্যায়ে অন্যান্য ডিসিপ্লিনে কিছুটা রিসার্চ করার সুযোগ আছে কিন্তু CSE ফিল্ডের রিসার্চারদের সরকারী ভাবে তেমন কোনো সুযোগ আমি এখনো খুজে পাই নাই (রিসেন্ট চালু হওয়া ফেলোশিপ ছাড়া) । তবে অ্যাসিস্ট্যন্ট প্রোগ্রামার এর পদের পরীক্ষায় বাংলা ইংলিশ আর ইতিহাস খুজে পেয়েছি। এভাবেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি !
ইসরায়েল বা ইরান নিজেরা পরমাণু এবং অন্যান্য দিক দিয়ে উন্নত হয়েছে তাদের রিসার্চারদের দাম দেয়ার কারণে। তাদের অর্থনীতিতে সমরাস্ত্রের পর বাজেটের একটা বিরাট অংশ তারা রেখেছে রিসার্চের জন্য। তারা রিসার্চারদের গুরুত্ব বোঝার কারনেই তা করেছে ।
যাই হোক CSE কিন্তু কেবল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের জন্য না। এর বিস্তৃতি সমুদ্রের মতন বিশাল। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এই সমুদ্রের মাঝে একটা দ্বীপ বলা যায়…আর এর এই দ্বীপের হার্ট বা হৃদয় হচ্ছে কোর প্রোগ্রামিং, অ্যাল্গো, ডাটা স্ট্রাকচার, OOP ইত্যাদি বেসিকস। যার এগুলো নিয়ে ঘুটিঘাটী ভাল লাগে সে চাইলেই যেকোনো দিকে সুইচ করতে পারে মনের স্থিরতার জন্য। হয় একাডেমিয়া কিংবা ইন্ডাস্ট্রি কিংবা যেকোনো প্লাটফরমে সুইচ করা। আর টেকনিকাল স্কিলের সাথে সিরিয়াসনেস থাকলে সিজিপিএ ফ্রিতে চলে আসতে পারে বৈকি !
তবে এমন একটা সময় আসবে আমাদের দেশেও হাইএন্ড রিসার্চ প্রজেক্ট হবে। ঝামেলা বিহীন প্রচুর গ্রান্ট তৈরী হবে সরকারী ভাবে। সেগুলোর প্রপার ইউটিলাইজেশান হবে। অর্থ অপচয় হবেনা । ফাইনাল আউটকাম দেখা যাবে । অল রেডি এই ধাপ গুলোর কিছুটা শুরু হয়ে গেছে কিছু মেধাবী মানুষের হাত ধরে কিন্তু তা এখনো পরিমানে কম । তবে সিএস ফিল্ডে একদিন এদেশে প্রচুর স্কিল্ড রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার এর প্রয়োজন হবে। যারা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসবে তারাও চাইলে ফুল টাইম রিসার্চার হয়ে যাবে । কারণ তখন রিসার্চার দের সামাজিক নিরাপত্তা তৈরী হবে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে । সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি রিসার্চ প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় ইন্ডাস্ট্রি দেশেই তৈরী হবে। বাহির থেকে দেশের মেধাগুলো এসে দেশকে তখন কিছু দিতে পারবে। তাই যারা এগুলো নিয়ে কাজ করছে এগিয়ে নেয়ার চেস্টা করছে তাদের সাথে ছোট্ট করে মনের কোনে সপ্ন দেখলে দোষ কি তাতে ?!
আর ৪ বছরের কোর্স গুলো শেষ করার পর বিসিএস দেয়াটাই যদি একটা সমাজের মানুষের কাছে একমাত্র মূলনীতি হয় তাহলে ভাই জিআরই দিয়ে সুবোধের মতন দূরে কোথাও চলে যাওয়াটাই মনে হয় অতি উত্তম! তাই নয় কি ?!
এগুলো আমার একান্তই নিজের ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষ্ণ থেকে লিখা। কাউকে কস্ট দেয়ার জন্য নয় তাই কোনো ভুল কিছু থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । গঠনমূলক মন্তব্য স্বাগতম । শেয়ার করতে চাইলে উপযুক্ত ক্রেডিট দিয়ে শেয়ার করতে পারবেন । ধন্যবাদ সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে লিখাটি পড়ার জন্য 🙂
#মনকথা #মনজিজ্ঞাসা #ভাবনা # পর্যবেক্ষণ #CSE #দেশ #বিদেশ